Wednesday, February 16, 2011

দর্শকদের বিশ্বকাপ কালই শুরু হয়ে গেল


ঘড়ির কাঁটা ১টা না ছুঁতেই দর্শকের ঢল নেমেছে মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। দুপুর সাড়ে ১২টা ও পৌনে ১টায় গ্রিনলাইন স্ক্যানিয়ার দুটো বাসে করে স্টেডিয়ামে ঢুকছিল পাকিস্তান ও বাংলাদেশ দল। রাস্তার দুই ধারে স্টেডিয়ামে ঢোকার অপেক্ষায় থাকা হাজার হাজার ক্রিকেটপ্রেমীর উল্লাসের শুরু তখনই।
কে বলবে বিশ্বকাপ শুরু হতে আরো কয়েকটা দিন, এটা প্রস্তুতি ম্যাচ। খেলা শুরু হতেই সমুদ্রের গর্জন উঠল স্টেডিয়ামে। বিশ্বকাপকে বরণ করে নিতে এর চেয়ে বেশি কী লাগে! উত্তেজনা, উন্মাদনা, আনন্দ আর প্রার্থনায় মাখামাখি হয়ে বিশ্বকাপ যেন নেমে এল হোম অব ক্রিকেটে। বিশাল স্থাপত্যে রূপ নেওয়া এই স্টেডিয়ামের চারপাশে সকাল থেকেই যেন মেলা। জনতার ঢল আর হুল্লোড়ে মনেই হচ্ছিল, গন্তব্য যেন একটাই আর উপলক্ষও। লাল-সবুজে মেশানো নানা ঢঙের জার্সি, গালে কপালে লাল-সবুজ উল্কি। ফাগুনের শুরুতেই যেন পহেলা বৈশাখ। বাঙালির উৎসবের আরো একটা উপলক্ষ হয়েই এল বিশ্বকাপ।
কেউ একজন বগলদাবা করে নিয়ে চলেছে আস্ত একটা বাঘ, বাহারি টুপি কারও মাথায়। ধানমণ্ডির তৌফিকদের ১৩ জনের দলটার গেটে দাঁড়িয়েও যেন তর সইছিল না, সঙ্গী ড্রামে বাড়ি পড়ল তাই ম্যাচের আগেই, পাল্লা দিয়ে বাজল ভুভুজেলা। আবার কারও যেন কোনো তাড়াই নেই। বিশ্বকাপের এই আগমনী যেন প্রাণভরে উপভোগের। স্টেডিয়ামের মূল ফটকে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মুখ আঁকা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের লোগো, পতাকা হাতে ওই লোগোর সামনেই গর্বিত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে বুয়েট থেকে আসা রাজুদের দলটা। ফটোসেশন চলছে! ভালোবাসা থেকে রং ফুটেড বোলারটাও বাদ গেল না। ওর নিচে দাঁড়িয়েই ছবি তুলতে ছেলে-বুড়োর লাইন। অবাক হতে হয় ময়মনসিংহ থেকে আসা সেলিম হোসেনদের দলটা দেখে। গায়ের জার্সি আর চোখমুখের উচ্ছ্বাস দেখে কে বলবে মাঝ বয়স পার করছেন সবাই। চাকরি কী ব্যবসার সব হিসাব-নিকাশ ফেলে প্রত্যেকে যেন ঢুকে গেছেন বিশ্বকাপে। ম্যাচের ফল নিয়েও দেখা গেল কোনো সংশয় নেই তাদের, 'বাংলাদেশ জিতবে, অবশ্যই জিতবে।' ওদের আর কী বলবেন, পশ্চিম গেটের খোঁজে প্রায় ছুটতে থাকা দুই বন্ধু চেসি আর আমানেরও তো এক কথা, 'বাংলাদেশই জিতবে।' অথচ একজন অস্ট্রেলিয়ান, অন্যজন ভারতীয়, দুজনের গায়েই লাল-সবুজ জার্সি, হাতে বাংলাদেশের পতাকা। বিশ্বকাপের উন্মাদনা বুঝি এমনই। আর আছে টিকিট, উন্মাদনা আর আনন্দের মাঝে অনন্ত হাহাকার হয়ে। ভেতরে সাকিবরা যখন ফিল্ডিংয়ে নেমে গেছেন, স্টেডিয়ামের বাইরে নিষ্ফল অপেক্ষায় তখনো হাজার হাজার মানুষ।

No comments: